তুষার-কন্যার গল্প

অটোয়া এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে যখন রাস্তায় নামলাম, তখন ১৯ নভেম্বরের হিম হিম রাত। হিমেল হাওয়া বইছে। ঝরে যাওয়া ম্যাপল পাতাগুলো নানা বর্ণে, নানা ছন্দে বাতাসের সাথে ইতস্তঃত ছোটাছুটি করছিল চারদিকে। জোর হিমেল হাওয়ায় বয়ে গায়ে মাথায় এসে লাগছিল সেগুলো।
যে হিমেল হাওয়ার সাথে বাংলাদেশে আমি আশৈশব পরিচিত, এটা সে হিমেল হাওয়া না। তাপমাত্রা মাইনাসে।
বাতাসও এমন ঠান্ডা হতে পারে আমার জানা ছিলনা। মনে হচ্ছিল পায়ে বরফ ঘষলেও তা এত ঠান্ডা লাগত না। ঠান্ডা বাতাস যেন হাড় পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাচ্ছে।
গায়ে ওভারকোট থাকায় কোন রকম বাঁচা গেছে কিন্তু গ্যাবার্ডিন ট্রাউজার পায়ের সুরক্ষা দিতে পারলনা, রীতিমতো হাত-পা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে।
গাড়িতে ঢুকে মনে হলো কলিজা পর্যন্ত ঠান্ডা হয়ে গেছে। আবহাওয়া বার্তা অনুযায়ী পরদিন সকাল ৯টা থেকে তুষারপাত শুরু হয়ে যাবার কথা। গাড়ির হিটারের উষ্ণতায় স্বাভাবিক হয়ে এল হাত-পা।
আধাঘন্টা পর নেপিয়েন’এ মেয়ের বাসায় গিয়ে পৌছালাম। আমাদের পৌঁছানোর কয়েকঘন্টা আগেই ও হাসপাতালে গেছে, অবজারভেশনে আছে।
ফজরের কিছুক্ষন পরেই জামাই এসে হাজির, ইমার্জেন্সি সি-সেকশনের কথা বলছেন ডাক্তার। হাসপাতালে যেতে হবে। শফিক’এর সাথে ভোরের রাস্তায় যখন বেরুলাম তখনও চারদিকে সবুজ।
আকাশে ঘন মেঘের কারনে পরিবেশটা বাংলাদেশের বর্ষাকালের তুমূল বৃষ্টিপাতের পূর্ব মূহুর্তের অবস্থা, মনে হয় মিনিট দশ-পনেরোর মধ্যেই অটোয়া হসপিটালের সিভিক ক্যাম্পাসে এসে পৌছালাম। মেয়ের সাথে দেখা করে ভিজিটরস রুমে এসে সুখবরের অপেক্ষা করছি।

সোফা থেকেই প্রশস্ত কাঁচের জানালার ওপাশে তুষারজমা আকাশটা দেখা যাচ্ছে। মোটামুটি ন’টা থেকেই মুজতবা আলীর সেই ছেঁড়া ছেঁড়া পেঁজা তুলার মতো তুষারপাতটা শুরু হয়ে গেলো। দশটায় খবর পেলাম যার আসার কথা ছিল আরো একমাস পর, তিনি আলহামদুলিল্লাহ চলে এসেছেন, বছরের তুষারপাতের প্রথম প্রহরে।
আমার প্রথম নাতনি সামাওয়ি মায়ামিন। এ যেন তুষারপাতের সাথে সাথে এক তুষার কন্যার আগমন।

সুগার লেভেল ব্যালান্স করতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নার্সারিতে। আপাতত কয়েকঘন্টা আমরা তাকে দেখতে পাবনা তবে ছবি পেয়ে গেলাম কয়েক মিনিটের মধ্যেই।
কিছুক্ষন ছবি দেখি আর কিছুক্ষন তুষারপাত দেখি।
জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি বেলা বারোটার মধ্যেই হালকা এক আস্তরণ শুভ্র সাদা তুষারের নীচে ঢাকা পড়ে গেল চারদিকের সব সবুজ। সবুজ বলতে মূলঃত ছিল ক্রীসমাস ট্রি-গুলোই। অন্য গাছের পাতারা আগেই ঝরে গেছে।
এই তুষারপাতের মধ্যেই দল বেধে পাখিরা উড়ছে খুব সাবলীল ভঙ্গিতে। ঠান্ডাকে ওরা যেন আমলেই নিচ্ছেনা। আমি যেন ওই পাখিদের ডানায় করে অসীমে হারালাম বারবার।

বেশ কয়েকঘন্টা পর তুষারকন্যা সামাওয়িকে দেখার অনুমতি মিলল। নার্সারিতে গিয়ে ওকে কোলে নিলাম। মনে হলো এ আমার আত্মার অংশ। মনে হচ্ছিলো আমার কলিজাটা কেটে একটা অংশ আমি কোলে নিয়েছি। আমার কলিজার অর্ধেক ভেতরে আর অর্ধেক এখন বাহিরে। এ একান্ত আমার’ই অংশ।

বাংলায় কলিজার টুকরা বলে একটা শব্দ আছে, মনে হয় আগে এর মানে বুঝিনি। সেই প্রথমবারের মতো এর প্রকৃত অর্থ বুঝতে পারলাম।
সপ্তাহ যেতেই মনে হলো সামাওয়ি আমার সব ভালোবাসা, আদর, স্নেহ এক চুমুকে শুষে নিয়েছে। সামাওয়ি ছাড়া আমি শূন্য, অসহায়।

কয়েকমাস পরে যেহেতু আমাকে দেশে ফিরতে হবে তখনকার অবলম্বন হিসেবে তুলতে থাকলাম অনেক অনেক ছবি আর করতে থাকলাম ভিডিও। পুরো উইন্টারটা সামাওয়ি’র সাথে কাটালাম। বরফ আর বরফের মাঝখানে। চারদিক শুভ্র সাদা আর সাদা।
সামাওয়িকে কোলে নিয়ে অবাক হয়ে তুষারপাত দেখতাম, নানা রকমের, হালকা, ভারী, মাঝারি। বারান্দা থেকে অটোয়া রিভারটা দেখা যায় সেটাও বরফে জমে গিয়েছিল, তাপমাত্রা যখন মাইনাস 40°র আশেপাশে। অটোয়া শহরের উইন্টার বৈচিত্র্য দেখি ঘুরে ঘুরে।

সামাওয়ির সব কিছুতেই আমার অপার মুগ্ধতা। সে নানা ভঙ্গীতে হাত রাখে, আমি অবাক হয়ে দেখি। ঘুমের মধ্যেই হাসে, হাত পা ছুঁড়ে কাঁদে, গাল আঁচড়ে ফেলে, গোসল করাতে নিলে মাছের মতো খেলে, তিন মাস বয়সে দেয়াল ঘড়িটার সাথে হলো তার বন্ধুত্ব, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মুখ ভরে হাসে, ট্যাপের পানি পড়ার শব্দ কান খাড়া করে শোনে, ফিডার আর ফরমুলার সাথে বিদ্রোহ করে বসে, আংগুল চুষতে শিখে ফেলে, পাহারা দিয়ে রাখতে হয়, শোয়ায়ে দিলে ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে যেতে শিখে। কথা বললে, উত্তরে উ-আ-গা, আউ শব্দ করে, এ’সবই আমি পরম মুগ্ধতা নিয়ে দেখি।

দেয়ালের ছবিগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখে, আমি প্রতিটা রুমের ছবি তাকে ঘুরে ঘুরে দেখাতে থাকি, ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে পানির শব্দ শোনাই, ওর মা’কে লুকিয়ে লুকিয়ে আংগুল চুষতে দেই, ডাইনিং এর পর্দাটা যে রিং থেকে ঝুলেছে সেটা ওর খুব পছন্দ! অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ওকে সেটা দেখতে দেই। ও দেখতেই থাকে দেখতেই থাকে, গালে গাল ছোঁয়ালে খুব খুশী হয়, মোবাইল ফোন দেখলেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, খাবারের ঘ্রান পেলে ছোট্ট পুতুলটা জিহ্বা দিয়ে ঠোট চাটতে শুরু করে, এই রকম বহু দৃশ্য আমি দেখতেই থাকি। বাইরে বেরুলে তাকে কারসিটে বন্দী হয়ে বেরুতে হয়, এই একটা দৃশ্য ছিল আমার খুব অপছন্দের।

সামাওয়ির মুখের দিকে তাকিয়ে পার করা চারটা মাস পর বুকভরা স্মৃতি নিয়ে আমি যখন আবার ঢাকার পথে, মন্ট্রিয়াল এয়ারপোর্টে তুষার কন্যা আমাকে বড় একটা হাসি দিয়ে বিদায় দিলেন। অবশ্য বিদায় দেয়া কাকে বলে সেটা তিনি তখন বুঝেন না। আমার মনে হচ্ছিল আমি তখন চীৎকার করে কেঁদে উঠব। সর্বপ্লাবী সে কান্না থামাতে আমি মেয়ে আর জামাইয়ের কাছ থেকে বিদায় না নিয়েই একছুটে ইমিগ্রেশনের লাইনে গিয়ে দাড়ালাম।

এখন বারো মাস বয়সে সামাওয়ি দাঁড়াতে শিখেছে, দূর্দান্ত গতিতে হামাগুড়িও দেয়।

আমার নিজের নানুর কথা মনে পড়ে। আমাকে ছয়-ছয়টি মাস অতি আদরে-যত্নে লালন পালনের গল্প শোনাত। মনোযোগ দিয়ে শুনতামনা অনেক সময়ই। নানু আমাকে এত ভালবাসতো! বুঝিনি আগে।
এভাবেই হয়তো এক জীবনের অনেক ভালবাসাকেই আমরা চিনতে পারিনা সবসময়। যখন বুঝি তখন সময় অনেক পার হয়ে যায়, সে ভালোবাসার আর নাগাল পাওয়া হয়না তখন।

ভিডিও কলে সামাওয়ি এখন আমার সাথে হাসতে শিখেছে। ওর কাছে আমি এখন কম্পিউটার স্ক্রিনের অতি পরিচিত মুখ। মিষ্টি করে হাসে। খেলতে শিখেছে। খেলায় ব্যস্ত হয়ে যায়, কয়েক মিনিট পরপর আবার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে হাসে। আমি অপেক্ষা করি কখন সে খেলার ফাঁকে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে এসে আমার দিকে একটু তাকাবে, একটু হাসবে, একটু কথা বলবে।
অধিকাংশ সময়ই আমরা শুধু হাসি বিনিময় করি। ভাব বিনিময়ের এটাই আমাদের প্রধান মাধ্যম।
কারন আমাদের শব্দ ভান্ডার খুবই অল্প। একে অন্যকে আমরা সে শব্দগুলোই বারবার ঘুরি্যে ফিরিয়ে শোনাই, সেগুলো হচ্ছে- তা, তা, তা- তাত্তা- তাত্তা, দা, দা, দা, দাদ্দা, দাদ্দা, না,না,না, নান্না, নান্না, তে, তে, তে, বই-বই, না-ন্না, না-ন্না, না-ন্না। দে-দ্দে, দ্দে-দ্দে……..।
আমরা হাসি ভরা মুখে এ শব্দগুলো বলতে থাকি। সকাল সন্ধ্যায় এভাবেই চলছে আমাদের ভালোবাসার আদান-প্রদান।
এভাবেই যত বয়স বাড়ে, ভালোবাসারা তত ডানা মেলে, শেকড় ছড়ায়, পল্লবিত হয়। সময়ের বাঁকে বাঁকে স্তুপাকার হয়।

মনেহয় এইতো সেদিন ছোট্ট আমার মেয়েটিকে কোলে নিয়েছিলাম আর এখন তার কোলে তারই ছোট্ট কন্যা!

Dhaka, November 15, 2017

শান্তি!! পরম প্রশান্তির শান্তি, তোমার জন্যে পথ খুঁজে ফেরা- হে সফল মানুষ।

বাসনা তাড়িত শহরে তিনি ধনাঢ্য অভিজাত
ভোগের সুযোগ যেখানে অবারিত অগাধ।
নেশার ঝিমুনীতে ভোর হয় সেই নগরীর রাত
তবু তিনি অনাবিল, পবিত্র- আল আমিন।

Continue reading “শান্তি!! পরম প্রশান্তির শান্তি, তোমার জন্যে পথ খুঁজে ফেরা- হে সফল মানুষ।”

আমি বাংলাদেশে যাব

এক

ওহাইও ষ্টেট ইউনিভার্সিটিতে আজকে আফনানের সব এডমিশন ফর্মালিটিজ কমপ্লিট হলো। বিকেলে বাসায় ফিরে ফ্রেস হয়ে ও ফেসবুকে বসে।

গতমাসে দেশে বেড়াতে যাবার সবগুলো ছবি ভাসছে তার চোখে।সবার ইনবক্সে আলাদা করে মেসেজ লেখার কথা ভাবে সে। ভাবতে ভাবতে শৈশবে হারায়। এখনও বাংলাদেশে যাবার আকূলতা ভরা শৈশবের বিষন্ন দিনগুলোর কথা মনে পড়ে , ও ,

I know that back when I was in BD I told everyone something, I know. . . এ’টুকু লিখেই থেমে যায় ; Continue reading “আমি বাংলাদেশে যাব”

মানিপ্লান্ট

লেকপাড়ের একটা বেঞ্চিতে বসে আছে শান্ত। রাকিব এলেই দু’জনে চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিট হাঁটবে।

–        ভাই  আপনি কি সত্যিই ভবিষ্যৎ জানেন?- বলেনতো?

মন্তব্যটা শুনে পেছনে তাকায় শান্ত। পাঞ্জাবী-টুপি পড়া, লম্বা দাঁড়িওয়ালা একজন ধার্মিক জ্যোতিষ টাইপ লোক তার ভাগ্য গণনার তল্পি-তল্পাসহ বসে আছে একটা গাছের নীচে।  তাঁর সামনে  পঁচিশ ছাব্বিশ বছর বয়সী দুজন তরুণ দাঁড়িয়ে। মন্তব্যটি তাদের একজনের।
Continue reading “মানিপ্লান্ট”

লালসালু ২০১৫

কি যন্ত্রণারে বাবা! বাসা থেকে নামতেই লালসালু ওয়ালাদের কবলে পড়তে হচ্ছে এক সপ্তাহ ধরে!
বাসার গেট থেকে কয়েকগজ দক্ষিণে রাস্তায় যে আইল্যান্ডের পাশে দাঁড়িয়ে আমি রিক্সা নেই ওখানে আইল্যান্ডের ওপরে গজিয়ে উঠেছে একটা লাল কাপড়ের ঘর- জরি আর গাঁদা ফুলে সাজানো । ঠিক যে ধরনের সুতি লাল কাপড়কেই লাল সালু বলা হতো এক সময়।
ওই ঘরের পাশে, লম্বা জুব্বা, টুপি পরা লাল চোখা একজন দাড়িওয়ালা লোক টুল পেতে বসে হাই ভল্যুমে মরমী গান বাজাচ্ছে। বড় একটা সাউন্ড বক্স রয়েছে সাথে। রিক্সার জন্য আইল্যান্ডের কোণাটায় দাঁড়াতেই প্রতিদিন হাত পেতে দেয় সামনে।
Continue reading “লালসালু ২০১৫”

আপোস

জাহানারার কোলের ওপর পড়ে আছে মহাশ্মশান কাব্য আর প্রবাসী পত্রিকাটা। এম সি সরকার জুয়েলারীর বিজ্ঞাপনের নেকলেসটার দিকে দৃষ্টি আটকে থাকে তার। অবিকল তার বিয়ের হারটার মতই। সে নেকলেস হয়তো জীবনে আর কোনদিনই পরবে না সে।

অন্ধকার ঘন হয়ে এসেছে। আর পড়া যাচ্ছে না। অন্ধকারের সাথে মিশে সেও নিশ্চল বসে থাকে।
স্বচ্ছল সৌখিন পরিবারের কারুকার্যময় পুরনো দোতলাকাঠের ঘর । আশ্বিনের রোদ- ছায়া খেলার মধ্যে দোতলার বারান্দায় লোহাকাঠের খুঁটিতে হেলান দিয়ে বসে আছে জাহানারা ।
জাম গাছের ঘন পাতার ফাঁকে ফাঁকে বেরিয়ে আসা, বিকেলের পড়ন্ত রোদের সোনালি আভায় মাখামাখি হয়ে আছে তার দুধ আলতা রং এর চেহারা। একুশ থেকে বয়সটা যেন ষোলতে এসে পা রেখেছে।
Continue reading “আপোস”

এসো কবি

শব্দ-ঠিকাদারদের অপশব্দের দূষণে
স্বেচ্ছাবন্দীত্বে ছিলেন কবি একদিন।
অ-কবিরা মঞ্চ কাঁপিয়েছে
‘স্বাধীনতা আমি’ ‘চেতনা আমি’ উল্লম্ফনে।
কষ্টের হাসি ঠোঁট প্রসারিত করে
বাণিজ্য বেসাতি কবিতায়, চেতনায়।
বিবেক বিক্রির এতো ব্যবসা
পৃথিবীর কোথাও হয়নি আর;
অন্ধকারের শব্দে মালা গাঁথে
শব্দ-দাসকূল।
ঐতিহ্যের বিধিমালা খুলে নেয়
উদগ্র নেশার কামড়ে সংজ্ঞাহীন ওদের
কলম নিয়ে খেলে যায় শয়তান।
বোমা ঝলসানো, বুলেট ঝাঝরা সময়
বিভ্রান্তির বরণ ডালায়।
আমাদের এ পতন মোছাতে ‘এসো কবি’।
রক্তে-শিরায় দ্রোহ নিয়ে জেগে আছি
জেগে আছি পল্লবিত পংক্তিমালার অপেক্ষায়।
আমূল প্রোথিত বিশ্বাসে- শেকড়ে
দাঁড়িয়ে আছি, জেগে আছি;
যন্ত্রণা সান্ত্বনার অবিমিশ্র স্রোতের বুকে-
বিশ্বাসের এ বাগানে
এসো কবি।

ফিরে আসা ফিরে যাওয়া

আজকেও ল্যাব কপিটা ফেয়ার করে জমা দেয়া হলো না রিমার। লিখতে বসার মতো একটু জায়গা বা পরিবেশ কোনটাই মিলেনি গত তিন-চার দিনে। সারাদিনের ক্লাশ শেষে ক্লান্তিতে ভেঙে পড়েছে শরীর। বাসায় ফেরার কথা মনে হতেই ক্লান্তিটা আরো ভারী হয়ে উঠেছে ওর জন্যে। অবশ্য বাসা না ভাবাই ভালো। সত্যিই তো, ওটা ওর বাসা না, আশ্রয়। আত্মীয়ের হলেও কথা ছিল- একেবারেই অনাত্মীয়ের আশ্রয়। নেত্রকোনায় ওর কলেজের ম্যাথ চিটার জামান স্যারের ছাত্র, ওদের পাশের গ্রামের ফারুক ভাই’র বাসা।
ছোট দুই রুমের বাসা। দেড় রুমেরও বলা যায়। কোন মেহমান চলে এলেই আর থাকার জায়গা থাকে না। ওকে তখন ছুটতে হয় উত্তরায় চাচার শ্বশুর বাড়ীর আত্মীয়ের বাসায়। আজকেও ও একটা সালোয়ার-কামিজ নিয়ে এসেছে ক্লাশ শেষে উত্তরায় যেতে হবে বলে। Continue reading “ফিরে আসা ফিরে যাওয়া”

সীমাবদ্ধতা ও মুক্তি

বিগত পঞ্চাশ বছরে সভ্যতা রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামোয় ঘটেছে কিছু দ্রুত পরিবর্তন ।এমনকি আজকের পৃথিবীকে যুগের ছকে ফেলে আলোচনা করাও কঠিন ।একশ বছরতো দুরের কথা পঞ্চাশ বছর আগেও আকাশের বিমান নয়, জলের জাহাজই ছিল দূর পথের প্রধান বাহন ।
এমনকি পারসোনাল কম্পিউটার এবং মুঠো ফোন সহজলভ্য হওয়ার বয়সও দু’ দশকের বেশী না। মাত্র ১৯৮২ সালে টাইম ম্যাগজিন মেশিন অব দ্যা ইয়ার ঘোষণা করেছিল পারসোনাল কম্পিউটারকে।
তবে তথ্য প্রযুক্তির নতুন নতুন আবিষ্কার ও ব্যপক প্রসারে যথেষ্ঠ সাংস্কৃতিক সাযুজ্য, আজকের পৃথিবীকে যখন গ্লোবাল ভিলেজে পরিনত করেছে,তখন অসংখ্য সভ্যতা,ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের উত্তরাধিকারের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত ক’রে যে নতুন পৃথিবী গড়তে হবে, আমাদের সামনে তেমন বিশ্বনেতা দৃষ্টিগোচর হচ্ছেনা ।
ফলে মানুষের সমতা প্রতিষ্ঠায় যেমন রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল এবং তার ধারাবাহিকতায় মানুষের মধ্যে আরেকটি সমতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে (সিডো ঘোষণা) সাধুবাদ জানিয়েও আমরা বলব একে আরো পরিমার্জনার অবকাশ রয়েছে । তা না হলে নারী অধিকার আন্দো লনের সফলতা অর্জন,কার্যকারিতা ,সর্বজন গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবোধক হয়েই থাকবে ।
বিশ্বব্যপী নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ ও সহিংসতা রোধের লক্ষ্যে জাতিসংঘ প্রনীত সিডো ঘোষণাটি স্বাক্ষর করেছে  ১৮৭ টি দেশ,
তবে পৃথিবীর অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও এটি স্বাক্ষর করেছে কিছু সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে । Continue reading “সীমাবদ্ধতা ও মুক্তি”

রমিজা

পিঠের ঝোলাটা আইল্যান্ডের ওপর নামিয়ে রেখে বাচ্চাদের স্কুলটার পাশে এসে বসে রমিজা ।
আজিজ মার্কেটের পরে পাওয়ার ষ্টেশনের রাস্তাটায় বিশ -পঁচিশটা শিশুর কলকাকলিতে মুখরিত স্কুলটা। রাস্তার পশ্চিম পাশের একটা অংশে দড়ি টেনে ঘন্টা দুয়েকের জন্য টানা হয়েছে স্কুলের সীমানা ।
আইল্যান্ডের গাছের সাথে হেলান দিয়ে বসে রমিজা দুলে দুলে পড়তে থাকে বাচ্চাদের সাথে ।
আমি হব সকাল বেলার পাখি/ সবার অগে কুসুম বাগে উঠব আমি ডাকি
বয়স কত হবে মেয়েটার? ২৫/২৬ না ১৬/১৭. . ? আন্দাজ করা কঠিন । ময়লা কাপড় আর জটা পাকানো চুলে পাগলী বলে মনে হলেও মোটামুটি সুস্থ স্বাভাবিকই মেয়েটা । হয়তো আই কিউ লেভেলটা একটু নীচের দিকে। যতটুকু অস্বাভাবিকতা সবটাই যেন তার বাইরে থেকে আরোপিত । অবয়বে অপরিচ্ছন্ন হলেও চোখদুটো তার পরিচ্ছন্ন সুন্দর।

Continue reading “রমিজা”